ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হলে, পরিত্যক্ত ওই এতিমখানাটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা বাজার সংলগ্ন মোস্তফা বেপারির বাড়ির দরজায় ২০০১ সালে হাসনাইনিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন ওই বাড়ির জামাতা হাফেজ মো. জামাল উদ্দিন। ২০০২ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বেসরকারি এতিমখানা দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেন।
রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর মাদরাসার ১০ জন ছাত্রের নামে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। তার পর প্রায় ৮ বছর মাদরাসা ও এতিমখানাটি চললেও গত প্রায় ১০ বছর ধরে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। কিন্তু মাদরাসা ও এতিখানার নামে নিয়মিত অনুদানের টাকা উত্তোলন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসনাইনিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা নামে পুরাতন একটি সাইনবোর্ড থাকলেও এর কোনো অস্তিত্ব নেই। তার বদলে ওই স্থানে হাসনাইনিয়া ক্যাডেট মাদরাসা নামের একটি প্রতিষ্ঠান চলছে। সেখানে প্রায় দেড়শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস করছে।
ক্যাডেট মাদরাসার পাশেই একটি জরাজীর্ণ ঘর রয়েছে। দরজা জানালা প্রায় ভেঙে পড়ছে। দেখলে বুঝা যায় এখানে বসবাসের কোনো চিহ্ন নেই।
ক্যাডেট মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মো. নাহিদ হোসেন জানান, ২০১৭ সালে এই ক্যাডেট মাদরাসা শুরু হলেও সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।
এলাকার মোকাম্মেল ও জুয়েলসহ অনেকেই জানান, ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর পরিত্যক্ত ঘর মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে অনেক আগে একটি হাফিজিয়া মাদরাসা ছিল। কিন্ত কোনো এতিমখানা দেখেননি এবং এতিমখানার কার্যক্রম তাদের চোখে পড়েনি।
এতিম খানার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ মো. জামাল উদ্দিন ও কমিটির সদস্য মো. হারুন জানান, এতিমখানার কমিটি নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। ১০ জন করে এতিমের নামে বরাদ্দ পেয়ে আসছেন এবং ওই টাকা এতিমদের জন্যই ব্যয় করা হয়। ‘কল্লাকাটা’ গুজব শুরু হলে এতিমরা বাড়ি চলে যায়। তবে তাদের এতিমখানা গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এখন ছাত্ররা আবার এসেছে। এতিমখানা সংস্কার করায় তাদেরকে পাশের পোস্ট অফিসে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ক্যাডেট মাদরাসার ক্লাস থেকে ডেকে এনে দেখানো হয়। এদের মধ্যে জুয়েল, ইউসুফ ও গোলাম রাব্বি জানায় তারা এতিম নন, তাদের পিতা বেঁচে আছে।
এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বেলা ১১ টার দিকে ভোলা প্রেসক্লাবে কোনো ‘দুর্নীতি ও অনিয়ম’ হয়নি বলে ওই মাদরাসা ও এতিমখানার পক্ষে হাফেজ জামাল উদ্দিন সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, যেখানে মাদরাসাটি স্থাপিত হয় সেখানে ওই জমির মালিকদের ওয়ারিশ পাকা ভবন নির্মাণ করায় পাশের একটি ঘরে মাদরাসা পরিচালিত হয়। গত এক বছর কোনো অনুদান উত্তোলন করা হয়নি বলেও দাবি তার। জামাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, স্থানীয় একটি মহল মাদরাসা ও এতিমখানা বন্ধ হয়েছে বলে অপপ্রচার করছে।
এ বিষযে ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি এতিমখানা পরিদর্শনে গিয়েছেন এবং চলতি বছরের অনুদানের চেক স্থগিত করে রেখেছেন। এতিমখানা না চালালে স্থায়ীভাবে অনুদান বন্ধ করে দেয়া হবে।